বিদ্যালয়ে শারীরিক শাস্তি বিষয়ে বাংলাদেশী শিশুদের মতামত
সূত্র: ইউনিসেফ কর্তৃক শিশুদের মতামত জরিপ ২০০৮ হতে।
এখনো
বাংলাদেশের অনেক শিশুকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে বাড়িতে, বিদ্যালয়ে ও
কর্মস্থলে শারীরিক শাস্তির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। যদিও শিশু
অধিকার সনদে সকল শিশুর মর্যাদাপূর্ণ ও শারীরিকভাবে শাস্তিমুক্ত আচরণ পাবার
কথা বলা আছে কিন্তু শারীরিক শাস্তি বিষয়ে আইনী ব্যবস্থার অনুপস্থিতির
সুযোগে শৃঙ্খলা বিধানের নামে পিতামাতা, শিক্ষক ও কর্মস্থলের ব্যবস্থাপকগণ
শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে শাস্তি দেন।
জরিপকালে
শিশুরা জানিয়েছে যে, বিদ্যালয়ে সকল ধরণের শিক্ষা পরিবেশেই শারীরিক
শাস্তি প্রদানের ঘটনা অনেক বেশি (৯১%)। শাস্তির পৌনঃপুনিকতা ও ধরন শিশুর
বয়স, জেন্ডার ও আর্থসামাজিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। শারীরিক শাস্তি
সবচেয়ে কম পায় ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা (৮১%) এবং সবচেয়ে বেশি
শারীরিক শাস্তি পায় ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী ছেলেরা (৯৮%)।
সর্বাধিক
ব্যবহৃত শাস্তির ধরণগুলোর মধ্যে রয়েছে ধমক দেয়া/তিরস্কার করা/ভত্সনা করা
(৯৭ শতাংশ), হাতের তালুতে বেত বা লাঠি দিয়ে আঘাত করা (৭৬ শতাংশ),
শ্রেণীকক্ষে দাঁড় করিয়ে রাখা (৬৩ শতাংশ), শরীরের অন্যান্য স্থানে
বেত/লাঠি দিয়ে মারা (৬০ শতাংশ), চড় মারা (৪৯ শতাংশ), কান বা চুল ধরে টানা
কিংবা চামড়া ধরে মুচড়ে দেয়া (৩৬ শতাংশ) এবং কান ধরে হাঁটুর উপর দাঁড়
করিয়ে রাখা (২৫ শতাংশ)। শাস্তির ব্যাপকতা এতো বেশি যে, ৫৩ শতাংশ
শিক্ষার্থী জানিয়েছে যে তারা শারীরিক শাস্তি ভোগ করে, প্রায় ২৩ ভাগ
শিক্ষার্থী বলেছে যে, এই ধরণের শাস্তির ঘটনা বিদ্যালয়ে প্রতিদিনই ঘটে।
প্রায় ৭ শতাংশ শিশু শারীরিক শাস্তির কারণে শরীরের অংশ কেটে যাওয়া কিংবা
আঘাত পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
সামগ্রিকভাবে,
শিশুদের বিবেচনায় বিদ্যালয়ে শারীরিক শাস্তি গ্রহণযোগ্য, প্রায় ৭৫ ভাগ
শিশু বিনাবাক্যব্যয়ে এই ধরণের শাস্তি মেনে নেয়ার পক্ষপাতি এবং প্রায় ১২
ভাগ শিশু সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে শারীরিক শাস্তিকে অনুমোদন করে। মাত্র ৬
শতাংশ শিশু বলেছে যে, শারীরিক শাস্তি কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দলভিত্তিক আলোচনায় শিশুরা বলেছে যে, এই ধরণের শাস্তি শিক্ষার্থীদের
বিদ্যালয়ের পড়া তৈরিতে অধ্যাবসায়ী হতে ও সঠিক পথে চলতে সহায়তা করে। তবে
সকল শিশু তুলনামূলকভাবে কম মারাত্মক ধরণের শৃঙ্খলা বিধানের পক্ষে মত
দিয়েছে।
সহপাঠীদের সামনে শারীরিক
শাস্তি প্রদানকে শিশুরা শারীরিক ক্ষতির চেয়েও অনেক বেশি মানসিক লজ্জার
বিষয় মনে করে। বিশেষ করে, সহ-শিক্ষা আছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলেদের
জন্যে এই ঘটনা বেশি লজ্জাজনক।
No comments:
Post a Comment