Thursday, May 31, 2012

একীভূত শিক্ষা

একীভূত শিক্ষা

আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে চালু করা হয়েছে একীভূত শিক্ষা। অতীতেও ছিল তবে বর্তমানে এ শিক্ষাকে অধীকতর জোরদার করা হয়েছে। আর এ জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে একীভূত শিক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ শিক্ষার গুরুত্ব অপরীসিম।
একীভূত শিক্ষা:
একীভূত কথাটার অর্থ হলো সমাজের সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ। একীভূত শিক্ষা হলো সকল শিশুকে মূলধারার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এনে একসাথে শিক্ষা দেয়া।
একীভূত বিদ্যালয়:
সকল শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগ-অনুভূতি, বিশ্বাস, ধর্ম, ভাষা বা অন্য কোন বিভিন্নতা থাকা সত্বেও একই বিদ্যালয়ে আসতে বাধা দেয়া যাবে না। একই বিদ্যালয়ে যাতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, শ্রমজীবি শিশু, পথ শিশু, যাযাবর সম্প্রদায়ের শিশু, উপজাতীয় বা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার শিশু এবং সুবিধা বঞ্চিত বিভিন্ন পরিবারের শিশুরা যাতে শিক্ষা অর্জন করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
একীভূত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য:
  • প্রত্যেক শিশুর শিক্ষার অধিকার রয়েছে এবং তাদের মূলধারার শিক্ষায় সমানভাবে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে;
  • শিক্ষা থেকে বাদ পড়তে পারে এমন বাধাসমূহ চিহ্নিত ও অপসারণ করা;
  • শুধু স্কুলে ভর্তি করা নয় বরং সকল শিশুর পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ ও শিক্ষা অর্জন নিশ্চিত করা;
  • শিশুদের বিভিন্নতা, বৈচিত্রতা ও পার্থক্যগুলোর প্রতি ইতিবাচক সাড়া প্রদান করা;
  • শিখন-শেখানো কার্যক্রমের গুণগতমান উন্নয়নের মাধ্যমে সকল শিশুর শিক্ষার চাহিদা পূরণ করা।



একীভূত শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

  • পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করা;
  • প্রত্যেক শিশুর চাহিদা ও সম্ভাবনা অনুযায়ী শিখন ও জ্ঞান অর্জনের প্রতিবন্ধকতা সীমিত ও দূরীকরণের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করা;
  • প্রতিটি শিশুই আলাদা এবং অনন্য- এই চিরায়ত সত্যকে মেনে নিয়ে প্রত্যেকের জন্য স্কুলে অবাধ শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
একীভূত শিক্ষার সুফল:
শিশুর সুফল:
  • সকল শিশু মুক্তভাবে শিখন-শেখানো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে;
  • সকল শিশু আত্মবিশ্বাস ও নিজস্বতাবোধ অর্জন করে;
  • সকল শিশু বৈচিত্র্যকে বুঝতে ও সম্মান করতে শেখে;
  • প্রত্যেকেরই ভিন্নতা ও ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা রয়েছে- সব শিশু তা বুঝতে পারে;
  • সকল শিশুই মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করে;
  • প্রত্যেক শিশু একে অপরের সহায়তাকারী হিসেবে বেড়ে উঠে।
শিক্ষকের সুফল:
  • শিখন-শেখানো কার্যক্রম বেশি শিশু-কেন্দ্রিক, কার্যকর ও সৃজনশীল হয়;
  • সমাজ ও অন্যান্য ব্যবস্থা থেকে শিক্ষক বেশি সহযোগিতা পেয়ে থাকেন;
  • শিখন-শেখানো কার্যক্রমে শিক্ষক সন্তষ্ট হন এবং তাঁর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
অভিভাবকের সুফল:
  • শিশুর শিখনের সঙ্গে অভিভাবক আরো বেশি সম্পৃক্ত হন;
  • বিদ্যালয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন কৌশল শেখার মাধ্যমে অভিভাবকের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটে;
  • বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অভিভাবকদের বেশি সম্পৃক্ততার কারণে শিশুর শিক্ষা ও সমস্যা সম্পর্কে বেশি সচেতন হন।
সমাজের সুফল:
  • অধিক হারে শিশু বিদ্যালয়ে গমন ও শিখন-শেখানো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে;
  • আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি পায়;
  • সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, অপরাধ প্রবণতা ইত্যাদি কমে আসে;
  • বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অধিকহারে সম্পৃক্ততা বিদ্যালয় ও সমাজের মধ্যে সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি ঘটায়।
জাতি তথা রাষ্ট্রের সুফল:
  • একীভূত সমাজ গঠিত হয়;
  • সকলের জন্য শিক্ষার লক্ষ্য অর্জিত হয়।
একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রতিবদ্ধকতা:
  • একীভূত শিক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের স্বল্পতা;
  • একীভূত শিক্ষা বিষয়ে উপযোগী কারিকুলাম ও শিক্ষা উপকরণের স্বল্পতা;
  • অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতাযুক্ত বিদ্যালয়;
  • সকল শিশুর (বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুসহ) শিক্ষার অধিকার রয়েছে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব;
  • সমাজের সকল স্তরের জনগোষ্ঠীর শিশুর বিশেষ করে সুবিধা বঞ্চিত ও প্রান্তিক শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে সচেতনতার অভাব।
একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জসমূহ:
  • একীভূত শিক্ষা বিষয়ে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের পরিবর্তন;
  • সকল পর্যায়ে বিশেষ করে নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বোধগম্যতা তৈরি;
  • শিক্ষক ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান;
  • বর্তমান কাঠামোর মাঝে থেকে সঠিক এবং উপযোগী শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করা;
  • উপযোগী শিখন-শেখানো উপকরণ ও শিখনসামগ্রী সরবরাহ এবং তার ব্যবহার;
  • সকল শিশুর শিখনের প্রতি লক্ষ্য রেখে নমনীয় কারিকুলাম, সময়সূচি এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রণয়ন;
  • প্রত্যেক শিশুর শিখন চাহিদার উপর ভিত্তি করে তার উপযোগী প্রতিবদ্ধকতাবিহীন এবং শিশু-কেন্দ্রিক শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা।



সংগ্রহ: দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে সংগৃহীত।

2 comments:

  1. খুব সুন্দর হয়েছে, তবে একজন মুসলিম হিসেবে আমার অপিনিয়ন হচ্ছে শিশু যখনই বালেগ বা এডাল্ড হয়ে যায় তখন ক্লাসকে আলাদা করণ করলে অনাহুত অনেক গোলযোগ হতে পরিবার ও সমাজকে বাজানো যাবে। তা না হলে বিয়ে বহির্ভুত প্রেম জনিত কারণে আত্মহত্যার মত মারাত্মক অপরাধ সমাজে দেখা যায়।

    ReplyDelete
  2. Great post | You write very well, I learned many things from your blog which were unknown

    ReplyDelete