Thursday, May 31, 2012

প্রাথমিক শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষা

বিশ্বব্যাপী আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রধানত তিনটি স্তরে বিন্যস্ত: প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা। এই শিক্ষা কাঠামোর প্রারম্ভিক ধাপই হচ্ছে প্রাথমিক বা মৌলিক শিক্ষা। যে কোন দেশের আর্থ সামাজিক পেক্ষাপট, রাজনৈতিক অংগীকার ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞান প্রয়োগ ক্ষমতার উপর সাধারণত প্রাথমিক শিক্ষাসহ অন্যান্য শিক্ষাস্তরের মেয়াদকাল, বিন্যাস ও বিস্তার বহুলাংশে নির্ভরশীল। তবে সব দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ  বিষয় হিসাবে স্বীকৃত।
প্রাথমিক শিক্ষা বলতে শিক্ষা প্রক্রিয়ার প্রথম বা ভিত্তি স্তরকেই বুঝানো হয়ে থাকে। সাধারণ অর্থে  শিক্ষার প্রথম স্তরটি জীবনের যে কোন সময়েই সূচিত হতে পারে। কারো বেলায় এটা শৈশব কাল থেকেই শুরু হতে পারে। আবার কারো বেলায়, যেমন নিরক্ষর বয়স্কদের বেলায় এটা পরিণত বয়সেও শুরু হতে পারে। কাজেই প্রাথমিক শিক্ষা কথাটি কিছুটা ধারণাগত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। শিক্ষাথীর বয়সের দিক বিবেচনা করলে এটি পাঁচ বা চয় বছর থেকে এগার-বার বা তের বছর বয়সী শিশুদের শিক্ষা স্তর। আবার শিক্ষার বিষয়ের দিক থেকে এটি এমন একটি শিক্ষাস্তর যেখানে শিশুরা লেখা, পড়া ও পাটি গণিত শেখার সংগে সংগে স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং সামজিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার বিষয়েও শিক্ষা লাভ করে থাকে। শ্রেণী ব্যাপ্তির দিক থেকে প্রাথমিক শিক্ষা কোন কোন দেশে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত, আবার কোন কোন দেশে প্রথম থেকে ষষ্ঠ বা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত। কাজেই প্রাথমিক শিক্ষার স্বরূপ ও প্রকৃতি নানা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বটে। তবে, বর্তমানে শিক্ষাবিদগণ প্রাথমিক শিক্ষাকে সামাজিক ও মনোবৈজ্ঞানিক দিক থেকে বিচার করার উপরই অধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন।
বর্তমান বিশ্বে সব রাষ্ট্রই প্রাথমিক শিক্ষার বেশিরভাগ দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। আর এই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য রাষ্ট্র বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি করে। তাই প্রাথমিক শিক্ষা বলতে বর্তমানে শিশুর সমগ্র শিক্ষাকালের সেই অংশকে বুঝানো হয়, যে সময় প্রত্যেক শিশুরই শিক্ষালয়ে থাকা উচিত।
সাধারণত সকল সমাজেই শিশুদের মধ্যে পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকে এগার-বার বয়স পর্যন্ত সময়কালে নিজ নিজ পারিবারিক বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার মনোবৈজ্ঞানিক ও সামাজিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময়কালে তারা তাদের শারীরিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে, খেলাধূলায় অংশগ্রহণ করতে পারে এবং নিজেদের চাহিদা ও মনোভাব প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। এছাড়া তারা সমবয়সীদের সাথে মিলে মিশে বৌদ্ধিক ও সামাজিক ‍শিখন আরম্ভ করে। এই বয়:স্তরের অর্থাত শৈশবকাল ও বয়সন্ধিকালের মধ্যবর্তী সময়কালের শিশুদের জন্য আয়োজিত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমকেই সাধারণ অর্থে সকল রাষ্ট্র বা সমাজে প্রাথমিক শিক্ষা বলে অবিহিত করা হয়।

No comments:

Post a Comment